ঢাকা , বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে ২৩৭ প্রধান শিক্ষক ও ৪৩১ জন সহকারী শিক্ষকের ঘাটতি


আপডেট সময় : ২০২৫-০৯-০৯ ১৮:৩১:০৯
হবিগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে ২৩৭ প্রধান শিক্ষক ও ৪৩১ জন সহকারী শিক্ষকের ঘাটতি হবিগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে ২৩৭ প্রধান শিক্ষক ও ৪৩১ জন সহকারী শিক্ষকের ঘাটতি
 
লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: 
 
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে প্রধান শিক্ষকসহ অনুমোদিত শিক্ষক পদ সংখ্যা ৬ জন। তবে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫টি পদই শুন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাস নেন মাত্র ২জন শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক মুর্শেদা বেগম  অন্যত্র বদলীর আদেশপ্রাপ্ত। শিক্ষক সংকট থাকায় তাকে প্রতিস্থাপন হিসেবে বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।

এছাড়া সহকারী শিক্ষিকা সুনিতা দাস গত ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত তিনি একাই পরিচালনা করছেন বিদ্যালয়টি। একই উপজেলার সুজনপুর সজীব আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের পদ সংখ্যা থাকলেই নেই একজনও।

৩ জন শিক্ষককে প্রতিস্থাপন হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তারা জনই অন্যত্র স্কুলে বদলীর আদেশপ্রাপ্ত। এরমধ্যে নন্দিতা রায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শুধু তাই নয়, একই চিত্র হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভাদগুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
 
বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৭টি। তবে প্রধান শিক্ষকসহ দায়িত্ব পালন করছেন ৩ জন। প্রতিদিন ক্লাস পরিচালনায় হিমশিমে পড়ছেন তারা। শিক্ষককদের দাবী দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। যে কারনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সরেজমিনে দুপুর ১২ টায় লাখাই উপজেলার কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ৩য় শ্রেনীর বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছেন দপ্তরী সবুজ চন্দ্র দাস। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা।

এ সময় আপনে ক্লাস নিচ্ছেন কেন প্রশ্ন  করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট। দুপুরের পর ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেনীর ক্লাসে শিক্ষকদের ঢুকতে হয়। আমাদের স্কুলে ২ জন শিক্ষক থাকায় ১টি ক্লাস ফাঁকা পড়ে। তাই শিক্ষকদের কথানুযায়ী আমাকে ক্লাস নিতে হয়। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুনিতা দাস বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ৫টি পদের মধ্যে ৪টি পদই শূন্য।

একজন শিক্ষক রয়েছেন, তিনিও বদলী হয়ে গেছেন। শিক্ষক সংকট থাকায় আমাকে এতো গুলো ক্লাস নিতে হিমশিমে পড়তে হয়। সুজনপুর সজীব আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নন্দিতা রায় বলেন আমার বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক নেই। আমরা যারা দায়িত্ব পালন করছি সকলেই বদলী প্রাপ্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় বর্র্ষাকালে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে কষ্ট হয়।

কোন শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে নতুন করে আসতে চান না ভাদগুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাহিমা আক্তার বলেন, ৭জনের মধ্যে আমরা ৩ জন দায়িত্ব পালন করছি। শিক্ষক শুণ্য থাকায় আমাদের প্রতিটি ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক কষ্ট হয়। সচেতন মহলের দাবী, জেলার শিক্ষার হার দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে তলানীতে অবস্থান। শিক্ষার মানের দিক দিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছুটা উন্নতি হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে এখনো ভঙ্গুর অবস্থা। দুর্গম যাতায়াত, অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, সামাজিক অসচেতনতা, শিক্ষক সংকটসহ নানা কারণ এর পেছনে দায়ি সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষক সংকট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। দুর্গম হাওরবেষ্টিত লাখাই, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে। অনেক প্রতিষ্ঠানে দুই থেকে তিন জন শিক্ষক দিয়ে চলে পাঠ কার্যক্রম। কোথাও কোথাও একজন শিক্ষক দিয়ে কোনোভাবে চলছে পাঠদান কার্যক্রম হাওর অঞ্চলের
 
শিক্ষার মানোন্নয়ন শিক্ষক সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তাগিদ সচেতন মহলের। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৪৪৩টি। এসব বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৭ হাজার ৭৭টি। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ৬ হাজার ১৯০ জন শিক্ষক। এর মধ্যে অপেক্ষামান ২৫০ ও ৬৯ জন সংরক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন।

অপেক্ষামান ও সংরক্ষিত শিক্ষক ছাড়া জেলার ৯টি উপজেলা প্রধান শিক্ষকসহ ৬৬৮ জন শিক্ষকের পদ শুণ্য রয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৬ জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক ১২ জন, নবীগঞ্জে প্রধান শিক্ষক ৪৫ জন ও সহকারী শিক্ষক ৮৬ জন, লাখাইয়ে প্রধান শিক্ষক ১৩ ও সহকারী শিক্ষক ৩৫, বানিয়াচংয়ে প্রধান শিক্ষক ২৯ ও সহকারী শিক্ষক ৬০, আজমিরীগঞ্জে প্রধান শিক্ষক ২৯ ও সহকারী শিক্ষক ৬০, মাধবপুরে প্রধান শিক্ষক ২৫ ও সহকারী শিক্ষক  ৫৫,  চুনারুঘাটে প্রধান শিক্ষক ৩১ ও সহকারী শিক্ষক ৬৪, বাহুবলে প্রধান শিক্ষক ২৮ ও সহকারী শিক্ষক ৪০ এবং শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রধান শিক্ষক ১১ জন ও ১৯ জন সহকারী শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।


 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ